তায়াম্মুম ইসলামি শরীয়তের একটি বিধান। পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হলে বা পানি পাওয়া না গেলে পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে অন্য বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা কে তায়াম্মুম বলে। তায়াম্মুম একটি আরবি শব্দ। তায়াম্মুমের বাংলা অর্থ হল সংকল্প বা উদ্দেশ্য। পবিত্রতা অর্জনের জন্য অযু বা গোসলের বিকল্প ব্যবস্থাই হল তায়াম্মুম। তায়াম্মুম করার অনেক বিধান ও নিয়ম রয়েছে। পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ হলে পানির অনুপস্থিততে তায়াম্মুম করা ফরজ।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
{অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো।}
[সূরা আল মায়েদা:৬]
অপর দিকে বুখারী হাদিসের বর্ণনায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি: একমাস হেঁটে আসার দূরত্ব পর্যন্ত আমার ভীতি বিস্তৃত করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। আর সমস্ত জমিন আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্র করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তির যখন নামাজের সময় হবে তখন সে যেন তা পড়ে নেয়।’(বর্ণনায় বুখারী)
তায়াম্মুম কি?
তায়াম্মুমের আভিধানিক অর্থ হল ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, কোনো বিষয়ের প্রতি ধাবিত হওয়া।অপরদিকে শরীয়তের পরিভাষায় তায়াম্মুমের অর্থ হল পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশে চেহারা ও দু’হাত পবিত্র মাটি, পাথর দিয়ে মাসেহ করা। অসুস্থতা বা কোনো কারণে পানি ব্যবহারে অপারগ হলে অথবা যাত্রা অবস্থায় পানি পাওয়া না গেলে পাথর কিংবা মাটি দিয়ে মুখ হাত পা মুছে পবিত্র হওয়াকে তায়াম্মুম বলে।
ইবাদতের সাথে পবিত্রতার সম্পর্ক গভীর ভাবে সম্পর্কিত। ফরজ ইবাদত পালনে পবিত্র হওয়া ফরজ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে, পানি ব্যবহারে অসুস্থতা বেড়ে গেলে, দূর পথে যাত্রা অবস্থায় পানি ব্যবহার করা সম্ভব না হলে মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতার জন্য সহজ বিধান অনুসারে তায়াম্মুমের বিধান দেন।
তায়াম্মুম বৈধ বা জায়েজ হওয়ার কতগুলো বিধান রয়েছে। সেগুলো হল
১. অনেক দুরের যাত্রা পথে মুসাফিরের জন্য পানি ব্যবহার করা কষ্টকর সে অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েজ।
২. পানি ব্যবহারের ফলে রুগ্ন ব্যক্তির রোগবৃদ্ধি আশঙ্কা থাকলে তার জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ।
৩. গোসল ফরজ এমন ব্যক্তি অধিক শীতের কারণে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা করলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করার বৈধ।
৪. কোনো স্হানে শত্রু বা হিংস্র প্রাণীর ভয়ে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে না পারলে তায়াম্মুম করা জায়েজ।
৫. পানির সংকট বা অধিক দাম দিয়ে পানি ক্রয় করতে হলে বা পানির ক্রয় করতে অক্ষম তায়াম্মুম করা বৈধ।
৬. ঈদের নামাজ অথবা জানাযা ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ।
৭. নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে তায়াম্মুম জায়েজ।
তায়াম্মুমের ফরজগুলো কি কি
তায়াম্মুম করার ফরজ ৬ টি
১. প্রথমে নিয়ত করা। ২. মাটি বা পাথরের উপর দুহাত রাখা ৩. এরপর চেহারা মাসেহ করা। ৪. অতপর দু’হাত মাসেহ করা। ৫. ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আবার দুহাত মাটিতে রেখে হালকা ঝেড়ে প্রথমে চেহারা ও পরে দু’হাত মাসেহ করা। ৬. মুয়ালাত তথা অবিচ্ছিন্নতা বজায় রেখে চেহারা মাসেহ করার পর বিলম্ব না করে হাত মাসেহ করা।
তায়াম্মুমের সুন্নাতগুলো কি কি
১. শুরতেই প্রথমে বিসমিল্লাহ পড়া।
২. এরপর মুখমণ্ডল, পরে হাত মাসেহ করা।
৩. অবশ্যই মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করার মাঝে অন্য কোনো কাজ না করা।
৪. এরপর মাটির ওপর হাত হালকা ঘষে নেওয়া।
৫. এবং উভয় হাত ঝেড়ে ফেলা।
৬. অবশ্যই মাটির ওপর হাত রাখার সময় আঙুলগুলো সোজা রাখা।
যেসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে:
পবিত্র মাটি, বালি, চুনা পাথর, কঙ্কর, মাটির তৈরি কাঁচা অথবা পাকা ইট, ধুলো-বালি, পাথর বা ইটের তৈরি দেয়াল। এছাড়াও কাপড়, লাকড়ী বা অন্য কোনো পবিত্র বস্তুতে ধুলাবালি লেগে থাকলে, এসব বস্তুর দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে।
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
১. প্রথমে মাটিতে একবার উভয় হাত রাখতে হবে।
২. এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ অথবা হাত ঝেড়ে নিতে হবে।
৩. এরপর দু’হাত দিয়ে প্রথমে চেহারা মাসেহ করতে হবে।
৪. অতপর আবার মাটিতে দু’হাত রাখতে হবে।
৫. এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দু’হাতে ফুঁ অথবা হাত ঝেড়ে নিতে হবে
৬. এখন বাম হাত ডান হাতের উপরের অংশে কনুই র্পযন্ত বুলিয়ে এবং কনুই থেকে নিচের অংশে কব্জি র্পযন্ত বুলাতে হবে। অতঃপর একই ভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাত বুলাতে হবে।
১. পানি না থাকা।
২. অজু ভেঙে যাওয়ার মত কিছু হওয়া যেমন বায়ু বের হওয়া।
৩. গোসল ফরজ হওয়ার মতো এমন কিছু হওয়া, যেমন স্বপ্নদোষ।
৪. পেশাব পায়খানার চাপ আসলে অজু যেমন ভেঙে যায় তেমনি তায়াম্মুম ও বাতিল হয়ে যায়।
৫. পোশাকে কোনো রক্ত লাগলে অজুর মত তায়াম্মুমও বাতিল হয়ে যায়।
উপসংহার
কোরআন তেলাওয়াত এবং নামাজ এ জাতীয় ফরজ ইবাদতগুলোর জন্য পবিত্রতা জরুরি। স্বাভাবিকভাবে পবিত্রতার মাধ্যম হিসেবে অযু এবং গোসল করা ফরজ। তবে অনেকে অসুস্থ থাকার ফলে বা বিশেষ কোনও পরিস্থিতির কারণে অথবা সফরে থাকাকালীন অবস্থায় পানি ব্যবহার না করতে পারার কারণে ওযু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে শরীয়তের বিধান অনুসারে তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্র হতে পারে।