Home
রূপচর্চায় সুষম খাদ্য কেন প্রয়োজনীয়

রূপচর্চায় সুষম খাদ্য কেন প্রয়োজনীয়

নিখুঁত সৌন্দর্যের অধিকারী সবাই হতে চায়।

নিয়মিত রূপচর্চায় আপনিও হতে পারেন নিঁখুত সৌন্দর্যের অধিকারী। সৌন্দর্যের কথা আসতে প্রথমে যে দুটো অঙ্গের কথা আসে তা হল ত্বক ও চুল। নিয়মিত ত্বক ও চুলের যত্ন নিলে আপনিও সারা বছর উজ্জ্বল আর ঈর্ষণীয় সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারবেন।

সবাই চায় ত্বকে কোনও দাগ থাকবে না, ত্বক হবে কোমল, নরম, টানটান। তার সঙ্গে ত্বকে থাকবে সতেজতা উজ্জ্বলতা। নামী-দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী পণ্যের ব্যবহার করা মানেই রূপচর্চা নয়। রূপচর্চার আসল রহস্য লুকিয়ে থাকে সুষম খাদ্যাভ্যাসে। সঠিক রূপচর্চা আর সুষম খাদ্যাভ্যাস যদি একসঙ্গে পালন করা যায় তাহলে আপনার সৌন্দর্য এমনিতেই প্রকাশ পাবে।
সুষম খাদ্য কি ও কাকে বলে?

যে সব খাবার আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে সেসব খাবারকে সুষম খাদ্য বলে। এছাড়াও এভাবে বলা যায় যে সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এমন পুষ্টি উপাদান সঠিক অনুপাতে যে ধরনের খাবারে অন্তর্ভুক্ত থাকে এমন খাবারকে সুষম খাদ্য বলে। আর সুষম খাদ্য মানেই হল আমিষ, শর্করা, ভিটামিন, স্নেহ, খনিজ লবণ ও পানি এই ছয়টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের প্রতিদিনের খাবারে যদি আমিষ, শর্করা, খনিজ, ভিটামিন, পানি ও স্নেহ বা চর্বিজাতীয় এই ছয়টি খাদ্য উপাদান রাখতে পারি তাহলে সুষম খাদ্যের অভাব দূর হবে। এই খাদ্য উপাদানগুলো সাধারণত ফল, শাকসবজি, শস্য, প্রোটিন এবং দুগ্ধজাত খাবারের মিশ্রণ নিয়ে গঠিত। এই খাবার গুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং শক্তি পাবেন।

সুষম খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কী কী?

সুষম খাদ্যের উপাদান ছয়টি। এই উপাদানগুলো হল :

      ভিটামিন : রঙিন ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।

      শর্করা : বাদামী চাল এবং গমের রুটির মধ্যে ফাইবার এবং শক্তির জন্য শর্করা পাওয়া যায়।

      আমিষ : চর্বিহীন মাংস, মাছ, মটরশুটি এবং বাদামের মধ্যে আমিষ জাতীয় উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে।

      দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই এবং পনিরের মধ্যে খনিজ উপাদান থাকে।

      চর্বি: অলিভ অয়েল এবং বাদামের মধ্যে চর্বি ও খনিজ উপাদান থাকে।

      পানি: শরীরের কার্যকারিতার জন্য প্রচুর পানি  দরকার যা প্রকৃতিতে পাওয়া যায়।

এই খাদ্য উপাদানগুলো আপনাকে সুস্থ ও রূপচর্চায় সাহায্য করে।

সুষম খাদ্য কোনগুলো

এখানে কিছু সুষম খাবারের তালিকা দেওয়া হল:

      বাদাম এবং বীজ (যেমন: বাদাম, চিয়া বীজ)

      দুগ্ধজাত বা দুগ্ধজাত বিকল্প (যেমন: দই, বাদাম, দুধ)

      স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন: জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো)

      ফল (যেমন: আপেল, কমলা, কলা)

      শাকসবজি (যেমন: ব্রকলি, পালং শাক, গাজর)

      ডিম

      পানি

      চর্বিহীন মাংস কাটা (যেমন: টার্কি, চর্বিহীন গরুর মাংস)

      পুরো শস্য (যেমন: ওটস, বাদামী চাল, পুরো গমের রুটি)

      চর্বিহীন প্রোটিন (যেমন: মুরগি, মাছ, মটরশুটি)

সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা অনেক কারণ এটি আমাদের শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি আমাদের সুস্থতা বজায় রাখে ও রূপচর্চায় সাহায্য করে।

সুষম খাদ্য কেন খেতে হবে?

 আমাদের শরীরে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের পরিমাণ বেড়ে গেলে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আমাদের ইমিউন সিস্টেমের উপর। এতে করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রদাহ বাড়ে। এমনকী শরীরে তৈরি হয় ক্যানসারের ঝুঁকি।

আমাদের শরীরকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাধারণত পাওয়া যায় বিভিন্ন ফল ও সবজিতে । বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। টমেটো, তরমুজ, আম, লেবুতে ভরপুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি ব্রকোলি, কর্ন, গাজরের মতো সবজিতেও অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
এছাড়া গ্রিনটিতেও খুব ভাল পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এই খাবার গুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে ও  ত্বককে ভাল রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রূপচর্চার  জন্য অনেক উপকারী।চুল, নখ ও ত্বক সুস্থ রাখতে সুষম খাদ্যাভ্যাস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে আমাদের এই খাবার গুলো রাখা উচিত।

 রূপচর্চায় সুষম খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব

 

রূপচর্চা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যাভাসের গুরুত্ব অনেক। পানি যেমন ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে, তেমনি অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনিতে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই যতটুকু পানি পান করা  প্রয়োজন, ততটাই পান করতে হবে।এছাড়াও

 

      চুল আমাদের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। আমাদের চুল মজবুত ও সুস্থ রাখতে আমিষজাতীয় খাবারের কোনো বিকল্প নেই। আমিষ জাতীয় খাবারের অভাবে চুল পড়ে যেতে পারে। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও নখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাছ, মাংস, ডিম, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার থেকে আমিষ পাওয়া যায়।

            অনেক সময় আয়রনের অভাবেও চুল পড়তে পারে। কচুশাকসহ অন্যান্য সবুজ শাক, পেয়ারা, আপেল, কলিজা প্রভৃতিতে আয়রন রয়েছে।

      দেহের ত্বক ভালো রাখতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাহায্য করে। মাছের তেলে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।

      চুল ও ত্বক সুস্থ রাখতে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ প্রয়োজনীয় উপাদান । রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল লেবু, আমড়া, পেয়ারাসহ বিভিন্ন টক ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ রয়েছে।

      চুল পড়া ও চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করবে জিংক এবং খনিজ উপাদান। কাঠবাদাম, ডিমের কুসুম, কলিজায় প্রয়োজনীয় উপাদানটি পাওয়া যায়।

      এ ছাড়া চুল ও ত্বকের সৌন্দর্যে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত।

 উপসংহার

আমাদের সুস্থতা ও রূপচর্চার জন্য সুষম খাদ্যাভাস বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। তাই প্রতিদিন বিভিন্ন রঙের ফল, শাকসবজি, শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং শরীর হাইড্রেটেড রাখার জন্য পানি গ্রহণ করা উচিত। সুষম খাদ্য শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যকেই সমর্থন করে না সেই সাথে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, সামগ্রিক মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে এবং রূপচর্চায় সাহায্য করে। একটি স্বাস্থ্যকর ও উদ্যমী জীবনযাপনের সুষম খাদ্যাভাসের কোনো বিকল্প নেই।